কোটা সংস্কার, মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অকালে ঝরে পড়া অসংখ্য তাজা প্রাণ—এসবের বিনিময়েই আজকের বাংলাদেশ। সন্দেহ নেই, অনেক দিন পরে পরিবর্তন একটা এসেছে। আপামর মানুষ পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে ছিল। প্রহর গুনছিল। মুখে কথা ছিল না, তবে চোখ খোলা ছিল। জেন–জি আর সাধারণ মানুষ অপেক্ষমাণ ছিল নতুন কিছু দেখবে বলে। তারা পুরোনো পথে, আগের জরাজীর্ণ রীতিতে, একই গীতিতে আর সুর মেলাতে চায় না। তাদের পরিবর্তন চাই। তাদের চাহিদা বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল ও লয়ে চলা। দয়া করে তাদের এখনই ‘না’ বলবেন না।
তারা আপনার–আমার সন্তান। এত দিন তারা সুপ্ত ছিল, তবে জেগে জেগে দেখছিল। তাদের সকাল-বিকাল কম করে মন্দ বলা হয়নি। আমি–আপনি সবাই বলেছি, তাদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না। হাতে বই নেই, মুখে রবির কবিতা–গান নেই, গল্প–উপন্যাসের নাম নেই, আদব–লেহাজ নেই—আরও কত কিছু। একদিন হঠাৎ আপনাকে না বলেই তারা বেরিয়ে গেল, বুক চিতিয়ে রক্ত দিল, রক্তে আগুন লাগার স্লোগান দিল, বুলেটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল, আপনি ঘরে বসে দেখলেন, আফসোস করলেন, তাদের মাকে দোষারোপ করলেন—আরও কত কিছু। শেষে আপনিও বেরিয়ে গেলেন, সন্তানকে খোঁজার জন্য নয়, দেশকে ফিরে পাওয়ার জন্য। কারণ, আপনার অভ্যাস পেছনে থাকা। সামনে যাওয়ার সাহস ও সময়—দুই–ই আপনি–আমি হারিয়েছি। কয় দিন ধরে তাদের প্রশংসায় আপনি পঞ্চমুখ হয়ে ছিলেন।
আহা! আমি–আপনি যা পারিনি, তারা তা করে দেখিয়ে দিয়েছে। কারণ, আমরা সুবিধাবাদী, ভীতু এবং অতীতমুখী। ইদানীং আপনার ফেলে আসা বীরত্বের গল্পেও কিছুটা ভাটা পড়েছে। ফলে তাদের মধ্যেই মা, মাটি ও মানুষকে দেখছেন, স্বদেশ আর এর ভবিষ্যতের নিশানা খুঁজেছেন। বাহবা দিয়ে এগিয়ে যেতে বলেছেন, দেশ তাদের হাতে নিরাপদ বলে জনতার সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন। সন্তানদের প্রতি ভালোবাসার নহর বইয়ে দিয়েছেন। নিজের সন্তান জেনে তাদের জন্য গর্ববোধ করেছেন।
গোলাম সরওয়ার পিন্টু-
প্রধান সমন্বয়ক- বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলন।