স্ত্রীকে বলেছিলেন ১০ মিনিটে ফিরবেন, পথেই গুলিবিদ্ধ হন মুরাদ

কাজ শেষে বাসার কাছাকাছি এসে স্ত্রীকে ফোন করে মুরাদ ইসলাম বলেছিলেন, ১০ মিনিটের মধ্যে ফিরছেন। বাড়ি ফেরার পথ ছিল সামান্য। এই পথেই সংঘর্ষে পড়ে যান মুরাদ। দুটি গুলি এসে লাগে তাঁর ঘাড়ের পেছনে। সেখানেই পড়ে যান তিনি।

প্রচুর রক্তক্ষরণ দেখে স্থানীয় লোকজন তাঁকে পাশের বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে জানানো হয়, মুরাদের গুলি লেগেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হন মুরাদ। তিনি বর্তমানে রাজধানী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক দীন মোহাম্মদ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘মুরাদের অস্ত্রোপচার–পরবর্তী পুনর্বাসন দরকার। দীর্ঘ সময় শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। তিনি সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসনকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে পারেন।’

চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রে বলা হয়েছে, রোগীর ঘাড়ে দুটি গুলি লেগেছিল। একটি গুলি স্পাইনাল কর্ড ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। আর অন্যটি আটকে ছিল, যা স্থানীয় হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে বের করা হয়। রোগীকে ২৪ দিনের লাইফ সাপোর্টে থাকতে হয়েছে। বর্তমানে তাঁকে পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার ইউনিটে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

স্ত্রী মহুয়া মার্জিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গুলশান-১–এ ‘দ্য ক্যাফে রিও’রেস্তোরাঁয় ব্যবস্থাপকের কাজ করতেন মুরাদ। ছেলে-মেয়েসহ মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন তাঁরা। সংঘর্ষের কারণে সারা দিন চিন্তিত ছিলেন মহুয়া। তাই স্বামীর ফেরার সময় হলে ফোন দিয়ে তাঁর খোঁজখবর নেন। তখন মুরাদ বলেছিলেন, ১০ মিনিটের মধ্যেই তিনি বাসায় পৌঁছাবেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হন মুরাদ ইসলাম
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হন মুরাদ ইসলামছবি: পরিবার থেকে সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হন মুরাদ ইসলাম ছবি: পরিবার থেকে সংগৃহীত১৫ মিনিট পর স্বামীর ফোন থেকে মহুয়ার নম্বরে কল আসে। তবে ফোনটি তাঁর স্বামী করেননি। তাঁকে যাঁরা উদ্ধার করেছেন, তাঁদের কেউ একজন ফোন করে জানান, মুরাদ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মহুয়া তখন তাঁর বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতে খবরটি জানিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান।

মহুয়া মার্জিয়া বলেন, মুরাদের মা-বাবা পাবনায় থাকেন। তাঁদের জন্য টাকা পাঠাতেন মুরাদ। তা ছাড়া তাঁর মেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ও ছেলে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। তাদের পড়াশোনার খরচ, ঢাকার বাসাভাড়া, খাওয়া ও চিকিৎসা খরচ এখন কীভাবে মেটাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।

মুরাদ ইসলামের বড় ভাই রাজীব ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসকেরা যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন, সেভাবেই চিকিৎসা করানো হচ্ছে। ব্যক্তিগত সঞ্চয় দিয়ে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সরকার পক্ষ থেকে স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে পরিবারটি কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *